স্যাটেলাইট কি? স্যাটেলাইটের কাজ কি?
স্যাটেলাইট বিষয়ক সকল তথ্য আজকের এই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সহজেই জানতে পাড়বেন।

স্যাটেলাইট কি এবং স্যাটেলাইট এর কাজ সমূহ: বর্তমানে আমরা তথ্য ও প্রযুক্তির এক বৈপ্লবিক যুগে বাস করছি। বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং তাদের তৈরি স্যাটেলাইটের ফলে আমরা এখন পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য যেকোনো প্রান্তের খবর নিমিষের মাধ্যমে জানতে পারি। স্যাটেলাইট ছাড়া এগুলো কখনোই সম্ভব হতো না। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে ইলেকট্রিক জিনিস গুলো ব্যবহার করে থাকি তার বেশিরভাগই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। স্যাটেলাইট ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম অসম্ভব। Read in English
Make Money Online With Mobile 2022
প্রতিদিন ফ্রি ১০০ টাকা মোবাইল রিচার্জ করুন অথবা বিকাশে টাকা নিন
আজকের এই নিবন্ধে আমরা জানবো স্যাটেলাইট কি এবং স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে। স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা এই আলোচনার মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো। এই বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে অবশ্যই আপনি আজকের এই নিবন্ধটি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন।
সম্পূর্ণ এই আলোচনাটি থেকে স্যাটেলাইট সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ আপনি সহজেই জানতে পারবেন।
স্যাটেলাইট কি ও স্যাটেলাইট এর পরিচিতি
স্যাটেলাইট শব্দটির জ্যোতির্বিজ্ঞানের সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন জোহানেস কেপলার 1610 খ্রিস্টাব্দে। তিনি তার প্রবন্ধে বৃহস্পতি গ্রহ কে ঘিরে ঘূর্ণায়মান চাঁদ গুলো কে বোঝানোর জন্য এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। যে চাঁদ গুলো প্রথম দেখেছিলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি তার নিজের নির্মিত টেলিস্কোপ দিয়ে।
বৃষ্টির আগে আকাশের রং কালো দেখায় কেন?
স্যাটেলাইট একটি ল্যাটিন শব্দ বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় অনুসরণ করা। একটি বস্তু যখন কাউকে অনুসরণ করে বা কাউকে কেন্দ্র করে তার চারদিকে ঘুরতে থাকে তাকে বলা হয় স্যাটেলাইট।
সংজ্ঞা অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই চাঁদ একটি স্যাটেলাইট কারণ এটি পৃথিবীর কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। আবার পৃথিবীর একটি স্যাটেলাইট কেন না পৃথিবীর সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। আবার সূর্য কেন্দ্র করে ঘোরে আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সি কে। অর্থাৎ এখানে সূর্য একটি স্যাটেলাইট। এইগুলো প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট।
নাসার বিজ্ঞানীদের অর্থের যোগান কোথা থেকে আসে?
মানুষের তৈরি কোন যন্ত্র পৃথিবী কে কেন্দ্র করে ঘুরছে এই ধরনের কিছু বোঝানোর জন্য স্যাটেলাইট শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয় 1936 সালে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত হয় 1957 সালে। তৎকালীন রাশিয়া বাস্তবিত ইউনিয়ন মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠায়। যার নাম ছিল স্পুটনিক 1। পরের বছরে অর্থাৎ 1958 সালে আমেরিকার তাদের প্রথম স্যাটেলাইট এক্সপ্লোরার 1 কে মহাকাশে প্রেরণ করে।
স্যাটেলাইট এর প্রকারভেদ
উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা স্যাটেলাইটের পরিচয় সম্পর্কে জানলাম। উক্ত আলোচনা থেকে আমরা এই ধারণা গ্রহণ করতে পেরেছি যে স্যাটেলাইট কৃত্তিম এবং প্রাকৃতিক হয়। যেহেতু আজকের এই আলোচনায় আমরা শুধুমাত্র কৃত্রিম স্যাটেলাইট আলোচনা করব তাই এই অংশে কৃত্রিম স্যাটেলাইট এর প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো।
অবস্থানের ভিত্তিতে স্যাটেলাইট মোট তিন ধরনের।
- LEO (low Earth Orbit)
- MEO (Medium Earth Orbit)
- GEO (Geostationary Earth Orbit)
LEO (low Earth Orbit)
এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১৬-২০০০ কিলোমিটার উপর অবস্থিত। স্যাটেলাইট গুলোর মূল কাজ নিজস্ব অরবিট এ থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এ কক্ষপথে অবস্থিত। এই স্যাটেলাইটগুলো মূলত টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সম্পর্কিত কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
MEO (Medium Earth Orbit)
পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ২০,০০০ কিলোমিটার উপরে স্যাটেলাইটগুলো অবস্থান করে। নেভিগেশন ও সামরিক বাহিনী দের কাজের জন্য মূলত জিপিএস স্যাটেলাইটগুলো এই কক্ষপথে পাঠানো হয়। সাধারনত এই কক্ষপথে অবস্থিত স্যাটেলাইটগুলো গতি অনেক মন্থর হয় এবং এগুলো প্রেরণ করতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়।
GEO (Geostationary Earth Orbit)
পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে 35 হাজার কিলোমিটার উপরে GEO (Geostationary Earth Orbit) এর স্যাটেলাইটগুলো অবস্থান করে। সাধারণত রেডিও ও টিভি এপ ট্রানস্মিশন সংক্রান্ত কাজের জন্য এই স্যাটেলাইটগুলো ব্যবহার করা হয়। এই কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুলো অ্যান্টেনা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে।
কাজের ভিত্তিতে স্যাটেলাইট কে আবার ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। যেগুলো হলো
- আবহাওয়া স্যাটেলাইট (Weather Satellite)
- কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট (Communication Satellite)
- জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট (Geostationary Satellite)
- নেভিগেশন স্যাটেলাইট (Navigation Satellite)
- পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট
- মিলিটারি স্যাটেলাইট
স্যাটেলাইট এর ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা
স্যাটেলাইট কি এবং স্যাটেলাইট এর প্রকারভেদ সম্পর্কে তথ্যাদি আমরা জানলাম। আলোচনার এই অংশে আমরা স্যাটেলাইট এর ব্যবহার ও স্যাটেলাইট এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানব।
ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় । 2022 সালে ফেসবুক থেকে আয়
স্যাটেলাইট ছাড়া আমরা বর্তমান সময়ের সকল প্রযুক্তি এত সহজে ব্যবহার করতে পারতাম না। আমরা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি তথ্য সহজে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রেরণ করতে পারি। স্যাটেলাইট ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।
অনেকেই অনেক সময় মনে করে টাওয়ার বসিয়ে বা সাবমেরিন ক্যাবল দিয়েই তো যোগাযোগ করা যায় তাহলে স্যাটেলাইট আর কি দরকার।
কিন্তু আপনার এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। মণিকরণ এমন একটি অবস্থানে আপনি রয়েছেন যেখানে কোন টাওয়ারের উপর নির্ভরশীল হয়ে আপনি যোগাযোগ করতে পারছেন না সে সময় আপনি কি করবেন? বা মনে করুন আপনি আমাজন বনে রয়েছে সেখান থেকে কি উপায়ে আপনার প্রিয় জন বা কোন প্রয়োজনীয় কাজে কারো সাথে যোগাযোগ করবেন?
সেই মুহূর্তে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে আপনি সহজেই সকলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা যে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করি সেই গুগল ম্যাপ টি ও কিন্তু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। স্যাটেলাইট না থাকলে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা যেত না।
স্যাটেলাইট ছাড়া সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করলে ডাটা লস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে স্যাটেলাইট দুটি স্থানের মধ্যে সেতুর মতো কাজ করে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডাটা ওপেন করলে ডাটা লস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
স্যাটেলাইট কিভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়?
স্যাটেলাইট কিভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এ বিষয়ে জানতে আমরা অনেক আগ্রহী। কক্ষপথে স্যাটেলাইট প্রেরণ করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মহাশূন্যযান রয়েছে। যেগুলোকে বলা হয় উৎক্ষেপণ যন্ত্র এবং এগুলো ব্যবহার করেই বিভিন্ন স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। স্যাটেলাইট পূরণের সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং মহাশূন্যযানের গতির সমতা রক্ষা করার ওপর। আমরা জানি অভিকর্ষজ ত্বরণ আমাদের উৎক্ষেপণ যন্ত্রকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করতে থাকবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় অবশ্যই এই অভিকর্ষজ ত্বরণ কে অতিক্রম করতে হবে।
দুই ধরনের উৎক্ষেপণ যন্ত্র ব্যবহার করে স্যাটেলাইট মহাশূন্যে প্রেরণ করা হয়। যার মধ্যে একটি হলো অবচয়যোগ্য রকেট এবং একটি মহাশূন্য শাটল। অপচয় যোগ্য রকেটগুলো মহাশূন্যে স্যাটেলাইট প্রেরণ করার পর নিজে নিজে ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে মহাশূন্য শাটল গুলো বারবার একই কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। উৎক্ষেপণ যোগ্য রকেটের গতিবেগ উচ্চতার ওপর নির্ভর করে থাকে। কম উচ্চতার কক্ষপথে এর বেগ থাকে 7.8 কি.মি/সে অন্যদিকে বেশি উচ্চতার কক্ষপথে এর দিক থাকে 3.1 কি.মি/সে।
বিভিন্ন দেশের প্রথম স্যাটেলাইট
দেশ | সাল | রকেটের নাম | স্যাটেলাইটের নাম |
সোভিয়েত ইউনিয়ন | ১৯৫৭ | স্পুটনিক-পিএস (রকেট) | স্পুটনিক-১ |
যুক্তরাষ্ট্র | ১৯৫৮ | জুনো-১ | এক্সপ্লোরার-১ |
ফ্রান্স | ১৯৬৫ | ডায়ামান্ট | এস্ট.রিক্স |
জাপান | ১৯৭০ | ল্যাম্বডা-৪এস (রকেট) | ওসুমি |
চীন | ১৯৭০ | লং মার্চ-১ | ডং ফ্যাং হং-১ |
যুক্তরাজ্য | ১৯৭১ | ব্ল্যাক এ্যারো | প্রোসপেরো এক্স-৩ |
ভারত | ১৯৮০ | স্যাটেলাইট লাঞ্চ | ভিহাইকেল রোহিণী |
ইসরায়েল | ১৯৮৮ | শ্যভিত | ওফেক-১ |
রাশিয়া | ১৯৯২ | সোয়ুজ-ইউ | কসমস-২১৭৫ |
ইউক্রেন | ১৯৯২ | সাইক্লোন-৩ | স্ট্রেলা |
ইরান | ২০০৯ | সাফির-২ | ওমিড |
বাংলাদেশ | ২০১৮ | ফ্যালকন ৯ | বঙ্গবন্ধু-১ |
স্যাটেলাইটের দূরত্ব ও বেগের হিসাব
স্যাটেলাইটের দূরত্ব ও বেগের হিসাব নিচে উল্লেখ করা হলো।
বেগ নির্ণয় :
Fc = Centrifugal force ( কেন্দ্রমুখী বল)
Fe = Centripetal force (কেন্দ্রবিমুখী বল)
এখন,
Fc = Fe
or, mv^2/(R+h)= mg
or, g = v^2/(R+h)
or, GM/(R+h)^2 = v^2/(R+h)
or, v = sqrt (GM/R+h)
এখন, G = Gravitational constant = 6.67 * 10^-11
M = Mass of earth = 6 * 10^24 kg
R = radius of earth = 6400 km
h = height from earth surface = 35000 km
So, Velocity of satellite = 3.075 * 10^3 m/s
দুরত্ব হিসেব :
v = sqrt GM/(R+h)
or, v^2 = GM/(R+h)
or, h = GM / v^2 – R
এখন, G = Gravitational constant = 6.67 * 10^-11
M = Mass of earth = 6 * 10^24 kg
R = radius of earth = 6400 km
v = Velocity of satellite = 3.075 * 10^3 m/s
so, h = 35000 km
স্যাটেলাইট ঘূর্ণায়মান, তাহলে পৃথিবীতে পড়ে যায় না কেন?
অনেক সময় আমাদের মনে এ প্রশ্নটি এসে থাকে। স্যাটেলাইট তো পৃথিবী কে কেন্দ্র করে তার চারপাশে সর্বদা ঘূর্ণন অবস্থায় রয়েছে। তাহলে এটি ভূপৃষ্ঠে পড়ে যাচ্ছে না কেন। এই প্রশ্নটি যত সহজ তার উত্তরও অনেক সহজ।
আমরা সকলেই কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সম্পর্কে জানি। কোন বস্তু যখন অন্য কোন বস্তুকে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরতে থাকে তখন কেন্দ্রিক একটি বল কাজ করে তাকে কেন্দ্রমুখী বল বলা হয়।
অপরদিকে ঘূর্ণায়মান বস্তুটি গ্রহ-নক্ষত্রের ছিটকে যাওয়ার জন্য বিপরীত দিকে যে বল অনুভব করে তাকে কেন্দ্রবিমুখী বল বলে।
এখন কেন্দ্রমুখী বল এবং কেন্দ্রবিমুখী বল যদি সমান হয় তাহলে বস্তুটি কোন দিকে ছিটকে না গিয়ে একি অক্ষ বরাবর ঘুরতে থাকে। স্যাটেলাইটের এই কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সমান থাকে যার ফলে সে ভূপৃষ্ঠে পড়ে না গিয়ে অথবা মহাশূন্যে ছিটকে না গিয়ে পৃথিবীর চারপাশে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।
সহজ একটি উদাহরণ দিয়ে এইটি ভালোভাবে বোঝানো সম্ভব। একটি সুতার মাথায় কোন একটি বস্তুকে বেঁধে আঙ্গুলকে কেন্দ্র করে এটি কোনাতে থাকো। তাহলে কি দেখলে সুতার টান এর কারণে বস্তুটির একটি কেন্দ্রমুখী বল তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বস্তুটি বাইরের অংশের ছিটকে যেতে চাই যার ফলে তার একটি কেন্দ্রবিমুখী বল রয়েছে। এখানে দুইটি বল সমান থাকার কারণে বস্তুটি বাইরের দিকে ছিটকে যাচ্ছে না বরং কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকছে।
একই কারণে স্যাটেলাইট তার কক্ষপথ থেকে ছিটকে যায় না বা পৃথিবীপৃষ্ঠে আছড়ে পরেনা।
ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইট কিভাবে সিগন্যাল রিসিভ করে?
আমাদের মনে অনেক সময় এ প্রশ্নটি আসে। স্যাটেলাইট তো সবসময় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় থাকে। তাহলে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যে সিগন্যাল প্রেরণ করা হয় সেগুলো স্যাটেলাইট কিভাবে রিসিভ করে। এই উত্তর টা ও অনেক সহজ।
আমরা জানি পৃথিবীর আহ্নিক গতি প্রায় 24 ঘন্টা। অর্থাৎ প্রতি 24 ঘণ্টায় পৃথিবী নিজে একবার ঘুরে। স্যাটেলাইট প্রেরণের সময় তাকে পৃথিবীর গতির সাথে সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর যে গতিতে ঘুরে স্যাটেলাইট ঠিক সেই গতিতে ঘুরতে থাকে। পৃথিবী ২৪ ঘন্টায় একবার ঘুরলে স্যাটেলাইট 24 ঘন্টায় পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। সেই কারণে পৃথিবী থেকে আপাতদৃষ্টিতে স্যাটেলাইটকে স্থির বলে মনে হয়। তাই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রেরণকৃত কোন সিগন্যাল রিসিভ দা ট্রান্সমিশন করতে কোন প্রকার সমস্যা হয় না।
কখনো কখনো এই সমতা হারিয়ে যায় যখন স্যাটেলাইট তার নিজস্ব গ্যাসীয় উদ্ভিদ এর মাধ্যমে পুনরায় ঠিক করে ফেলে।
স্যাটেলাইটের পাওয়ার সরবরাহ
স্যাটেলাইটে পাওয়ার সরবরাহ করার জন্য প্রত্যেক স্যাটেলাইট 32,000 মাউন্টেড করা থাকে এছাড়াও ব্যাকআপ হিসেবে ক্যাডমিয়াম ব্যাটারি রাখা হয়। এগুলোই স্যাটেলাইটে প্রতিনিয়ত পাওয়ার সরবরাহ করে।
কোন কোন ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটে পাওয়ার সরবরাহ করার জন্য নিউক্লিয়ার সোর্স ব্যবহার করা হয়। স্যাটেলাইটের পাওয়ারসহ একে নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করার জন্য স্যাটেলাইট একটি অন বোর্ড কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে।
স্যাটেলাইটের সংযুক্ত এই কম্পিউটারটি এর সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে।
স্যাটেলাইট এর গঠন। স্যাটেলাইট কি কি ডিভাইস নিয়ে গঠিত?
স্যাটেলাইট অনেকগুলো বস্তুর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। স্যাটেলাইটের মূল চালিকা শক্তি হল স্যাটেলাইট Transponder। এই বস্তুটি নিম্নোক্ত ডিভাইস গুলো নিয়ে গঠিত
- Band Pass Filter
- Low Noise Amplifier
- Frequency Translator
- Micro Shift Oscillator
- Radio Frequency Mixer
- Power Amplifier
- High Resoluted Camera
- Processor with High Clock Speed
- High Power Transmitting Antenna
- High Power Receiving Antenna
স্যাটেলাইটের বিকল্প প্রযুক্তি। কোনটিতে বেশি সুবিধা?
স্যাটেলাইটের বিকল্প প্রযুক্তি হলো সাবমেরিন ক্যাবল। এই সাবমেরিন ক্যাবল বলে সাগরের নিচে পাতানো থাকে। অপটিক্যাল ফাইবার এর মাধ্যমে চোখের পলক পড়ার আগেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ডাটা পৌঁছানো সম্ভব। সুবিধার কথা চিন্তা করলে স্যাটেলাইট এর চেয়ে সাবমেরিন কেবল এ সুবিধা অনেক বেশি। এই কারণগুলো হলো-
- ব্যান্ডউইথ অনেক বেশি
- ডাটা পৌঁছে আলোর গতিতে
- লেজার বা এলইডি ব্যবহার করে ডাটা পৌঁছানো হয়
- ডাটা লস কম হয়
- ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স নেই
তবে স্যাটেলাইট ছাড়া চলা অনেকটা অসম্ভব কারণ চাইলেই যখন তখন সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন বসানো সম্ভব হয় না। আন্তর্জাতিক টেলিফোন সংস্থা থেকে প্রত্যেক দেশকেই একটি নির্দিষ্ট ব্যান্ডউইথ বেঁধে দেওয়া হয়। তাই সাবমেরিন ক্যাবল এর পাশাপাশি স্যাটেলাইটকে ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে।
আপলিংক ও ডাউনলিংক কি?
আপলিংক: গ্রাউন্ড স্টেশন এন্টেনা থেকে যে ডাটা লিংক/চ্যানেলের মাধ্যমে ডাটা স্যাটেলাইট এর রিসিভিং এন্টেনায় পৌঁছে তাকে আপলিংক বলে।
ডাউনলিংক: স্যাটেলাইটের ট্রান্স মিটিং অ্যান্টেনা থেকে যে চ্যানেল/ ডাটা লিংক এর মাধ্যমে গ্রাউন্ড স্টেশন এর এন্টেনায় পৌঁছে তাকে ডাউনলিংক বলে।
আপলিংক এবং ডাউনলিংক একে অপরের বিপরীত।
বিভিন্ন দেশের মোট স্যাটেলাইট এর সংখ্যা
1957 সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন রাশিয়া মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণ করে। পরের বছরে পৃথিবীর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে আমেরিকা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়। সর্বশেষ বাংলাদেশ 57 তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। পৃথিবী কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার স্যাটেলাইট প্রতিনিয়ত ঘূর্ণায়মান।
- যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট সংখ্যা 1,616 টি
- সোভিয়েত রাশিয়া ভুক্ত দেশগুলোর স্যাটেলাইট সংখ্যা 1,504 টি
- চীনের স্যাটেলাইট সংখ্যা 298 টি
- জাপানের স্যাটেলাইট সংখ্যা 172 টি
- ভারতের স্যাটেলাইট সংখ্যা 88 টি
- ফ্রান্সের স্যাটেলাইট সংখ্যা 68 টি
- বৃটেনের স্যাটেলাইট সংখ্যা 42 টি
- দক্ষিণ কোরিয়া স্যাটেলাইট সংখ্যা 24 টি
- স্পেনের স্যাটেলাইট সংখ্যা 23 টি
- তুরস্কের স্যাটেলাইট সংখ্যা 14 টি
- সৌদি আরবের স্যাটেলাইট সংখ্যা 13 টি
- পাকিস্তানের স্যাটেলাইট সংখ্যা তিনটি
- বাংলাদেশের স্যাটেলাইট সংখ্যা একটি
এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অসংখ্য স্যাটেলাইট পৃথিবীর চারপাশে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘূর্ণায়মান। আশাকরি আমাদের আজকের এই নিবন্ধটি আপনার অবশ্যই ভালো লেগেছে। বিজ্ঞান সম্পর্কিত আরও সুন্দর সুন্দর পোস্ট বা তথ্য পেতে আমাদের নিচে দেওয়া লিংকে ভিজিট করুন। পোস্টটি ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।