Islam

যাকাত আদায়ের নিয়ম (জেনে নিন) যাকাতের হিসাব, কিভাবে যাকাত দিবেন।

যাকাত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন আজকের আলোচনা থেকে।

যাকাত আদায়ের নিয়ম: ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে অন্যতম প্রধান রুকন হল যাকাত। প্রতিটি সম্পদশালী বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা মুসলিমদের উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে। যাকাত অন্যতম প্রধান একটি ইবাদত। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত তার উপর যদি যাকাত ফরজ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিয়ম অনুযায়ী যাকাত প্রদান করা। আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল (স) যাকাত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা যে নিয়ম প্রদান করেছেন অবশ্যই আমাদেরকে সেই নিয়ম অনুযায়ী সম্পদের হিসাব করে যাকাত প্রদান করতে হবে। আল্লাহতালা যে সমস্ত লোকদের যাকাত দিতেন বলেছেন তাদের মাধ্যমে নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরভাবে যাকাতের পন্য বন্টন করতে হবে। Read in English

আল্লাহতালা বলেছেন প্রত্যেক ধনী ব্যক্তির সম্পদের ওপর গরিবের একটি নির্দিষ্ট হক রয়েছে। এবং এই হক এর নামই হলো যাকাত। আমাদের আজকের এই নিবন্ধে যাকাত হিসাব করার নিয়ম, যাকাত প্রদানের নিয়ম, কোন ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করতে হবে, কোন ব্যক্তি যাকাত পাওয়ার হকদার ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের সম্পূর্ণ আলোচনা থেকে আপনি যাকাত সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন। যাকাত আদায়ের নিয়ম

যাকাত সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সকলকে আমাদের আলোচনার শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।

যাকাত কেন দিতে হবে?

আমাদের সর্বপ্রথম যে বিষয়টি জানা দরকার সেটি হল যাকাত কেন দিতে হবে? অনেক ব্যক্তি এই প্রশ্নটিই করে থাকেন। অনেকেই আবার ভাবেন নিজের কষ্ট করা উপার্জন থেকে কেন আরেকজনকে দিতে হবে। আল্লাহতালা এবং মহানবী (স) এই বিষয়ে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।

যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আমাদের সম্পদ হালাল হয় এবং পবিত্র হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রত্যেক মুসলিম কে যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাত আদায়ের নিয়ম

যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি আছে, তাদের প্রত্যেককে বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত প্রদান করতে হবে।

Rules-for-collection-of-Zakat-1
যাকাত আদায়ের নিয়ম

কোন কোন সম্পদের যাকাত প্রদান করতে হয়?

ইসলামী আইন অনুযায়ী একজন মুসলিমের মালিকানা ধীন সম্পদের পরিমাণ অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে। যে সকল সম্পদগুলোরর যাকাত প্রদান করতে হয় সেগুলোর মধ্যে প্রধান  সম্পদ গুলো হলো –

স্বর্ণ-রৌপ্য, নগদ অর্থ, গবাদী পশু, ফসল এবং সব রকমের বাণিজ্যিক পণ্য সমূহ।

স্বর্ণ ও রৌপ্য (অলঙ্কার)

এক হিজরী বছর পরে একজন ব্যাক্তির মালিকানায় নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্য (অলঙ্কার) থাকলেই যাকাত প্রদান করতে হবে তা সেই স্বর্ণ ও রৌপ্য (অলঙ্কার) যে উদ্যেশেই জমিয়ে রাখা হোক না কেন। সোনা বা রূপা ছাড়া অন্য কোন কোন ধাতব পণ্যের জন্য যাকাত ওয়াজিব হয়না। তবে সে সকল পণ্য ব্যবসার হলে ব্যবসায় পণ্য হিসেবে তার ওপর যাকাত প্রদান করতে হবে।

নগদ অর্থ

ব্যাংক নোট টাকা, রুপি, রিয়াল, ডলার যেকোন নগদ অর্থ যেকোনো ব্যবসায়ী কাগজপত্র যার বৈষয়িক মূল্য আছে তার যাকাত প্রদান করতে হবে।

ব্যবসার পণ্য

যে সকল পণ্য দিয়ে ব্যবসা করা হয় বা ব্যবসার জন্য যে সকল পণ্য বেচাকেনা বা বিক্রি করা হয় সে সকল ফোনের যাকাত প্রদান করতে হবে। প্রতি বছর শেষে ব্যবসার পণ্য সমুহের নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ যাকাত হিসেবে প্রদান করা ওয়াজিব বলে অনেক আলেমগণ মনে করেন।

চতুষ্পদ প্রাণী

উট, গরু এবং ছাগলের যাকাত প্রদান করতে হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম উক্ত তিনটি প্রাণীর যাকাত প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন। এই তিনটি প্রাণী ব্যতীত অন্য প্রাণী যাকাত প্রদান করতে হবে না তা সংখ্যায় যতই হোক না কেন। তবে ঘোড়া, মহিষ, মুরগি, গৃহপালিত পাখি ইত্যাদি প্রাণীগুলো যদি ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত হয় তাহলে ব্যবসার পণ্য হিসেবে সেগুলোর যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাত আদায়ের নিয়ম

ফল ও ফসল

একজন মুসলিম বছর শেষান্তে তার ফল ও ফসলের যাকাত প্রদান করবে। ইসলামে উল্লেখ করা হয়েছে যে সকল ফসল গুলো সংরক্ষন করা যায় তার যাকাত দিতে হবে। হাদিসে গম, জব, খেজুর ও কিসমিস এর যাকাত দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই চারটি ফসল ছাড়াও যে সকল ফসলগুলো অধিক দিনের জন্য সংরক্ষণ করা যায় যেমন, ভুট্টা ধান বা চাল ইত্যাদি ফসলের ক্ষেত্রে যাকাত দেয়া ওয়াজিব। তবে শাকসবজির কোন যাকাত প্রদান করতে হবে না।

কার ওপর যাকাত ফরজ?

যাকাত প্রদানের পূর্বে আমাদের জানতে হবে আসলেই কি আমাদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে কিনা। কতটুকু সম্পত্তি থাকলে একজন মুসলিমের উপর যাকাত ফরজ হয়। যাকাত আদায়ের নিয়ম

Rules-for-collection-of-Zakat-2
কার ওপর যাকাত ফরজ

আল্লাহ তাআলা বলেছেন যদি একজন মুসলিমের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে থাকে তাহলে তার যাকাত প্রদান করতে হবে। নিসাব একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনযাপন করার পরেও সেই সকল পণ্য বাদ দিয়ে যদি একজন ব্যক্তির সাহায্যে সাড়ে 52 তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ থাকে বা এই সমমূল্যের ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তাহলে যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাত আদায়ের নিয়ম

এই নিসাব পরিমাণ সম্পদ দিয়ে যদি একজন মুসলিমের কাছে সারা বছর ধরে থেকে থাকে তাহলে সে যাকাত প্রদান করবে।

যাকাতের পরিমাণ কত?

যাকাত ফরজ হওয়ার পরে আমাদের জানতে হবে সম্পদের কতটুকু অংশ যাকাত দিতে হবে। আল্লাহতালা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যতটুকু যাকাত দিতে বলেছেন আমাদের ঠিক ততটুকুই যাকাত দিতে হবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন একজন ব্যক্তি বছর শেষান্তে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার আড়াই শতাংশ সম্পত্তি যাকাত প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি 100 টাকায় আড়াই টাকা যাকাত দিতে হবে।

কাদেরকে যাকাত দিতে হবে?

ইসলামী বিধান অনুযায়ী আর ধরনের মানুষকে যাকাত প্রদান করা যাবে। এই আটটি খাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যাকাত প্রদানের অনুমতি দিয়েছেন। যেই আর ধরনের ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে বা যারা যাকাত গ্রহণের যোগ্য তারা হল- যাকাত আদায়ের নিয়ম

  • ফকির
  • মিসকিন
  • যাকাত আদায় কারী ও হেফাজতকারী
  • ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোনো অমুসলিমকে যাকাত প্রদান
  • দাস মুক্তির জন্য
  • ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
  • আল্লাহর রাস্তায় এবং
  • মুসাফির

উপরে উল্লেখিত ৮ টি খাতে যাকাত দেওয়া যাবে। এই ৮ টি খাত বাকি তো আর কেউ যাকাত পাওয়ার যোগ্য নয়।

উপসংহার

ইসলাম মোট পাঁচটি রুকনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কালিমা, সালাত, যাকাত, সাওম এবং হজ্ব। প্রতিটি রুকন খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত ফরজ হলে অবশ্যই তা আদায় করতে হবে। যাকাত নিয়মিতভাবে আদায় না করা হলে সম্পদ খাটি হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যাকাত দিলে কখনো সম্পদ কমে না বরং সম্পদের বৃদ্ধি ঘটে এবং সম্পদ পরিষ্কার হয়। তাই অবশ্যই আমাদেরকে যাকাত আদায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করা যায়। তাই সকলকে নির্ধারিত সময়ে যাকাত আদায় করতে হবে।

Akash

I am Akash Mahmud and I am a Graduate. I love to write articles. I am friendly and helpful. You will get your required information here. Keep Supporting Us.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please Turn Off Adblocker to Get Your Information